৬ বছর কারাবাসে খালেদা জিয়ার ‘এক রুমবন্দি’ ১৪তম ঈদ

0

 

৬ বছর কারাবাসে খালেদা জিয়ার ‘এক রুমবন্দি’ ১৪তম ঈদ


খালেদা জিয়া (ফাইল ফটো)


কারাবাসের ছয় বছরে ‘এক রুমবন্দি’ ঈদ উদযাপন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি ঈদ কেটেছে একটি রুমের ভেতরে অবস্থান করেই। সর্বশেষ সোমবার (১৭ জুন) ঈদুল আজহার দিনটিও ব্যতিক্রম ছিল না। গুলশান-২-এর বাসা ‘ফিরোজা’তেই নিজের কক্ষে কেটেছে ঈদের সময়। সাক্ষাৎ দিয়েছেন দলের সিনিয়র নেতাদের। সঙ্গ দিয়েছেন আত্মীয়স্বজন ও শিশুদের।

দলীয় নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। ঈদের দিন দলের সিনিয়র নেতারা তার পক্ষ থেকে ঈদ শুভেচ্ছা জানালেও তার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা কামনা করেন। সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য।

ads26

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন তিনি।’ 

ads27

চেয়ারপারসনের কার্যালয় ও ‘ফিরোজা’র একাধিক দায়িত্বশীলের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, বেগম জিয়ার এখন ঈদের দিন বলতে বিশেষ কিছু নেই। ২০১৮ সালের পর থেকেই তাকে একটি রুমেই অবস্থান করতে হচ্ছে।

সোমবার ঈদের দিনে নিয়মিত বাসার পাচকের হাতে রান্না করা খাবার গ্রহণ করেছেন খালেদা জিয়া। বাসায় তার ভাগনে, পরিবারের নিকটজন ও শিশুদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন তিনি। তবে তার অবস্থান এক রুমেই। সাধারণত সিনিয়র নেতাদের কেউ বাসায় গেলে কথা বলেন। কারও কারও সালামের উত্তর দেন।

ads28

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, বিগত ৫০ বছর ধরে নির্দিষ্ট পাচক-পরিবারই খালেদা জিয়ার পরিবারের রান্নার কাজে যুক্ত। তার স্বামী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যখন উপ-সেনাপ্রধান, তখন থেকেই এই পরিবারটি তাদের রান্নার কাজে যুক্ত।

পরিবারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া ব্যক্তিগতভাবে শিশুদের সঙ্গে গল্পে অনেক আনন্দ করেন। কথাবার্তা বলেন প্রাণখুলে। তার ভাগনে ও ছেলের দিকের নাতি-নাতনিদের সঙ্গে গল্প করতে পছন্দ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে দলের উচ্চপর্যায়ের একজন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ব্যক্তিগত জীবনে খালেদা জিয়া রাগী, মিশুক, শান্ত এবং পরিবারের প্রতি তার যে অনুরক্ততা, সেগুলোকে রাজনৈতিক দর্শনে পরিণত করতে পারেননি বিএনপির নেতারা। একজন রাজনৈতিক নেতার এসব আচরণের যে প্রতিফলন ঘটাতে হয়, তার কোনও রেশ নেই। দলের লোকেরাও এসব থেকে দূরে।’


এক রুমে বন্দি ১৪তম ঈদ


পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাবরণ করেন। আদালতের আদেশে তাকে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। ওই বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা তিনি সেই পরিত্যক্ত কারাগারে কাটান। পুরনো কারাগারে দুই ঈদের প্রথমটিতে দলীয় নেতারা সাক্ষাতের সুযোগ না পেলেও পরিবারের অন্তত ২০ সদস্য খাবার, ফুলসহ তার সঙ্গে দেখা করেন।

২০১৯ সালে বন্দি অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করেন তিনি। ওই সময়ও ‘এক রুমে’ই ছিল তার অবস্থান।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মুখে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পাওয়ার শর্ত ছিল—তিনি তার বাসাতেই অবস্থান করবেন এবং ঢাকাতেই চিকিৎসা করাবেন। ফলশ্রুতিতে শর্ত মেনে ওই বছরের দুটি ঈদ তিনি তার ভাড়া করা বাসভবন ফিরোজায় কাটান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘ম্যাডাম কারাগারে যাওয়ার পর অসুস্থ হয়ে যান। মুক্তি পাওয়ার সময়ও তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে বাসায় ফেরেন। সে কারণে বাসায় ফিরলেও তার চিকিৎসা ছিল চলমান। তার বাসাটিও ‘একটি মিনি হাসপাতাল’ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।’’

২০২১ সালে বাসা ও হাসপাতালের মধ্যে যাতায়াত ছিল বিএনপি চেয়ারপারসনের। ওই বছরের ঈদুল ফিতরের দিন তিনি এভার কেয়ারের একটি কেবিনে সময় কাটান। মূলত তার চিকিৎসা চলছিল কেবিনে। ওই বছর ঈদুল আজহার সময় তিনি ফিরোজাতেই ছিলেন।

এরপর ২০২২, ২০২৩ এবং চলতি বছরের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করেন ফিরোজাতেই।

বাসভবনের একজন দায়িত্বশীল বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মেডিক্যাল ট্রিটমেন্টের মধ্যেই রয়েছেন বেগম জিয়া। প্রতিরাতে সাক্ষাৎ করতে আসেন চিকিৎসকরা।

এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৯০ দশক থেকে প্রতি বছর রমজান মাসজুড়ে চলে ‘ইফতার রাজনীতি’, সেটার পূর্ণতা পায় ঈদের দিন। এদিন রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনি এলাকায় গিয়ে ঈদের নামাজের পর তৃণমূল নেতাকর্মী ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কোলাকুলি করতেন।’

‘ঈদের দিন তাদের সুখ-দুঃখের কথা শুনতেন। ঈদের সালামিও দিতেন বেগম জিয়া, কিন্তু মহামারি করোনার কারণে তা বন্ধ হয়’ বলে জানান শায়রুল কবির। 

গত ১ মে এভার কেয়ার হাসপাতালে যান বিএনপির চেয়ারপারসন। পরে ২ মে ফেরেন বাসায়।

প্রসঙ্গত, এক-এগারোর মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময় সংসদ ভবন এলাকায় সাবজেলে বন্দি থাকাকালে দুটি ঈদ কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া।

Post a Comment

0Comments

Post a Comment (0)